নিউজ ডেক্স
- ২৬ আগস্ট, ২০২৫ / ১৮৯ বার পঠিত

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের অধীনস্থ পরিসংখ্যান বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক সংকটে ভুগছে। শিক্ষক সংকট, স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু না থাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বল্পতায় শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ের পাঁচটি ব্যাচে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬২ জন। অথচ স্থায়ী শিক্ষক আছেন মাত্র চারজন। এর মধ্যে একজন শিক্ষাছুটিতে থাকায় কার্যত মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে পুরো বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে। ফলে পাঠদান, পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রমে গুরুতর সংকট তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীরা সেশনজটের মুখে পড়েছেন। ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এখানে ৫৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক।
এদিকে বিভাগে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু না থাকায় ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বাধ্য হয়ে তাদের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে।
শুধু শিক্ষকই নয়, কর্মচারী সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ১৬২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে মাত্র একজন কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারী। সেমিনার লাইব্রেরিতে নেই কোনো লাইব্রেরিয়ান, ফলে শিক্ষার্থীরা এটি ব্যবহার করতে পারছেন না। একইভাবে দুটি কম্পিউটার ল্যাবে নেই কোনো ল্যাব এটেনডেন্ট বা ল্যাব ডেমনস্ট্রেটর। সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান শিক্ষার্থীদের নিজেদেরই করতে হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নূর হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের বিভাগ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঁচটি ব্যাচ সামলানো সম্ভব নয়। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে কিছু ক্লাস নিলেও পাঠ্যক্রমে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে মাস্টার্স প্রোগ্রামও চালু করা যাচ্ছে না। আমরা বারবার আশ্বাস পেলেও নিয়োগের কোনো অগ্রগতি হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।
একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন রনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। কর্মচারী না থাকায় লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারছি না। ল্যাবে সফটওয়্যার ইনস্টল না থাকায় পরীক্ষার সময় বিপাকে পড়তে হয়। ল্যাব ডেমনস্ট্রেটর থাকলে অন্তত এ সমস্যায় পড়তে হতো না। আমরা দ্রুত সমাধান চাই।”
পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোছাঃ তাওয়াবুন্নাহার বলেন, একজন শিক্ষকের ৭-৮টি কোর্স পড়াতে হচ্ছে, যা স্বাভাবিক নয়। শিক্ষক সংকটের কারণে স্নাতকোত্তর চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি কর্মচারী সংকটের কারণে ল্যাব, লাইব্রেরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থায়ী শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগই এখন জরুরি।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা রবিবার (২৪ আগস্ট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা বিষয়টি একাধিকবার ইউজিসিকে জানিয়েছি। শুধু পরিসংখ্যান বিভাগ নয়, আরও কয়েকটি বিভাগেও একই সমস্যা রয়েছে। সামনে ইউজিসির সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করা হবে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত হয়।